নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সমর্থক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৌরাত্ম বেড়েছে। সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদককে স্পষ্টভাবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা জারি রেখেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রাজউকের সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করছে দুদক। এরমধ্যে রাজউকের অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার ও ইমারত পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
রাজউকের সচেতন মহলের দাবি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বারবার আলোচনায় আসছে রাজউক। সমালোচিত হচ্ছে সর্বমহলে। নিয়মিত সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। টিআইবি মনে করে, 'রাজউক' ও 'দুর্নীতি' সমার্থক শব্দ। প্রতিনিয়ত দেশের পত্রিকাগুলোতে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে প্রকাশিত হচ্ছে এখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘুষ অনিয়মের খবর।
জানা যায়, অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার, ইমারত পরিদর্শকরা স্থানীয় দালাল, ভবন মালিক ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসাজশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শতশত ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল অবকাঠামো নির্মাণ করছেন। ভবন নির্মাণের আবেদন থেকে শুরু করে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত পদে পদে অফিসারদের খুশি করতে হয়।
রাজউক ভবনে গুঞ্জন আছে, কর্মকর্তাদের প্রায় প্রত্যেকের মাসিক আয় সরকারী বেতনের ২৫-৫০ গুণ বেশি। গড়ে তুলছেন বিত্ত-বৈভবের রাজমহল। আলিসান বাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, দামী গাড়ি আর বিলাসবহুল জীবনযাত্রা তাদেরকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য এক উচ্চতায়। অল্প কয়েকজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার জন্য বেশিরভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা দুদকের চোখ ফাঁকি দিতে পারছে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ বলয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। দালালচক্র কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে ভবনের নকশা ও ছাড়পত্রের অনুমোদন করিয়ে দিয়ে ভবন মালিকের কাছ থেকে বাগিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। তারপর ভবন মালিক কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় ৫ তলা অনুমোদিত ভবনে ৬ তলা, ৭ তলা আবার ৬ তলা অনুমোদিত ভবনে ৭ তলা ৮ তলা নির্মাণ করে ফেলে। ভবনের পার্শ্বে জায়গা রাখে না, পার্কিং রাখে না, আবাসিকের পাশাপাশি কয়েক তলা বানিজ্যিক করে ফেলে। নিচের ২ তলায় রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়লেও উপরের দিকে রাস্তার উপরে বিল্ডিং নিয়ে আসে। ভবন মালিকদের এই সকল অনিয়মে ইমারত পরিদর্শকদের খুশির সীমা থাকে না। নিয়ম বহির্ভূত ভবন নির্মাণের জন্য ভবন মালিককে দেওয়া হয় নোটিশ। ডাকা হয় অফিসে। দেখানো হয় ভবন ভাঙ্গা ও মামলার ভয়ভীতি। এতেই ভবন মালিক আবারো কুপোকাত হয়ে যায়। ব্যাস হয়ে গেলো কর্মকর্তাদের জন্য লাখ টাকার ব্যবস্থা। না থাকুক তার বাড়ির কার পার্কিং, বৃদ্ধি করুক ভবনের উচ্চতা, বাড়িয়ে দিক রাস্তার দিকে তার বিল্ডিং, বানিয়ে ফেলুক আবাসিক ভবনের অর্ধেককে বানিজ্যিক, তাতে ইমারত পরিদর্শকসহ কর্মকর্তাদের কি আসে যায়? তারা অফিসার, তাদের প্রয়োজন টাকা। টাকা পেলেই সব ওকে। যা দু চারটা ভবন বা দেওয়াল ভাঙ্গা হয় তার বেশির ভাগই ভবন মালিকদের সাথে টাকা পয়সা নিয়ে বনিবনা না হওয়ার কারনে।
রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম, দূর্নীতি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করা হলেও এইসব অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধের জন্য খুব একটা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। কর্মকর্তাদের এই অসধুতার জন্য ঝুকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে জীবনের উপর ঝুকি, ভবনের কারপাকিং এর অভাবে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘুষ গ্রহণের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজউকের কর্মকর্তার চাকরী চলে গেছে, তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এমন সংবাদ পত্রিকায় খুব একটা দেখা যায় না। এ ব্যাপরে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষন করা যাচ্ছে।
সম্পাদক প্রকাশক: মাহমুদুল হাসান, অফিস যোগাযোগ: বাড়ি নং- ০৪ (৩য় তলা), রোড নং- ০১, সেক্টর নং- ১০, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা- ১২৩০।
মোবাইল: 01972884400
ই-মেইলঃ durnitirs@gmail.com
Copyright © 2025 দূর্নীতির সংবাদ. All rights reserved.